স্থিতিস্থাপকতা(Elasticity)

নবম-দশম শ্রেণি (দাখিল) - পদার্থ বিজ্ঞান - পদার্থের অবস্থা ও চাপ (State of matter and pressure) | | NCTB BOOK
5

তোমরা সবাই কখনো না কখনো একটা স্প্রিং কিংবা একটা রাবার ব্যান্ড টেনে লম্বা করে আবার ছেড়ে দিয়েছ। তোমরা নিশ্চয়ই লক্ষ করেছ স্প্রিং কিংবা রাবার ব্যান্ডকে টেনে ছেড়ে দেওয়া হলে সেটা আবার আগের দৈর্ঘ্যে ফিরে এসেছে। টেনে ধরাকে পদার্থবিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় বল প্রয়োগ করা আর দৈর্ঘ্য পরিবর্তন হওয়াকে বলা হয় বিকৃতি ঘটা। দৈনন্দিন জীবনে বিকৃতি শব্দটি খুবই নেতিবাচক। কিন্তু এখানে এটাকে তোমরা নেতিবাচক হিসেবে দেখো না। এটা হচ্ছে অবস্থার পরিবর্তন মাত্র ! 

কাজেই তোমরা বুঝতে পারছ যখন কোনো বস্তুকে বল প্রদান করা হয় তখন তার ভেতরে একটা বিকৃতি ঘটে (এবং এই বিকৃতির জন্য একটা পাল্টা বলের তৈরি হয়) বলটি সরিয়ে নিলে বিকৃতির অবসান ঘটে আর বস্তুটি আবার তার আগের অবস্থায় ফিরে যায়। পদার্থের এই ধর্মের নাম স্থিতিস্থাপকতা। তবে মনে রাখতে হবে কতটুকু বল প্রয়োগ করা যাবে তার একটা সীমা আছে। এই সীমা অতিক্রম করে ফেললে পদার্থ তার আগের অবস্থায় ফিরে আসতে পারবে না। তার মাঝে একটা স্থায়ী বিকৃতি ঘটে যেতে পারে। এই সীমাকে স্থিতিস্থাপক সীমা বলে। একটা রডকে অল্প একটু বাঁকা করে ছেড়ে দিলে সেটা সোজা হয়ে যায়। বেশি বাঁকা করলে বাঁকা হয়েই থাকে আর সোজা হয় না। কাজেই আমরা বিষয়টা এভাবে বলতে পারি: 

বিকৃতি: বাইরে থেকে বল প্রয়োগ করলে পদার্থের আকার বা দৈর্ঘ্যের যে আপেক্ষিক পরিবর্তন হয় সেটা হচ্ছে বিকৃতি। অর্থাৎ L0 দৈর্ঘ্যের একটি বস্তুর ওপর বল প্রয়োগ করা হলে তার দৈর্ঘ্য যদি L হয় তাহলে বিকৃতি হচ্ছে 

                                                                L-L0L0

 দেখাই যাচ্ছে বিকৃতির কোনো একক নেই, এটি একটি সংখ্যা মাত্র 

পীড়ন: একক ক্ষেত্রফলে বিকৃতির কারণে পদার্থের ভেতর যে বল তৈরি হয় সেটাই হচ্ছে পীড়ন। অর্থাৎ A প্রস্থচ্ছেদের একটা বস্তুতে বল প্রয়োগ করা হলে যদি তার বিকৃতি ঘটে সেই বিকৃতি যদি F প্রতিরোধ বল তৈরি করে তাহলে পীড়ন হচ্ছে

 দেখতেই পাচ্ছ এটা চাপের মতো এবং এর একক Pa বা প্যাসকেল। 

 

হুকের সুত্র: আমরা যদি পীড়ন এবং বিকৃতি বুঝে থাকি তাহলে হুকের সূত্রটি বোঝা খুব সহজ। এই সূত্র অনুসারে স্থিতিস্থাপক সীমার ভেতরে পীড়ন এবং বিকৃতি সমানুপাতিক 

                                                     পীড়ন α  বিকৃতি 

কাজেই 

                                                 পীড়ন = ধ্রুবক x বিকৃতি 

অর্থাৎ প্রত্যেক পদার্থের পীড়ন এবং বিকৃতির সাথে সম্পর্কযুক্ত একটা ধ্রুবক থাকে, সেই ধ্রুবকটার নাম স্থিতিস্থাপক গুণাক | 

দুটি নির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা করলে বোঝা আরো সহজ হবে: 

(i) ধরা যাক A প্রস্থচ্ছেদের একটা তারের দৈর্ঘ্য Lo, এর সাথে W ওজনের একটা স্তর ঝুলিয়ে দেওয়া হলো এই বলটি ঝোলানের কারণে Lo দৈর্ঘ্যটি বেড়ে হলো L. এই বর্ধিত দৈর্ঘ্য তারটির ভেতরে একটা পাল্টা বল তৈরি করেছে ? (এখানে T অক্ষরটি ব্যবহার করা হয় টেনশন Tension শব্দটির জন্য। সাধারণত যখন কোনো তারকে টানা হয় তখন তার ভেতরে যে বল কাজ করে তার নাম টেনশন)। কাজেই পীড়ন হচ্ছে T/ A এবং বিকৃতি হচ্ছে: 

                                           L-L0L0

                         কাজেই   TAL-L0L0

                       কিংবা       TA=YL-L0L0

এই ধ্রুবকের নাম ইয়াসে মডুলাস (Young's Modulus)। যেহেতু বিকৃতির কোনো একক নেই তাই Y এর একক হচ্ছে Nm-2 টেবিল 5.02 এ কয়েকটি পদার্থের ইয়াংস মডুলাস দেওয়া হলো। 

টেবিল 5.02ঃকয়েকটি পদার্থের ইয়াংস মডুলাস 

                       পদার্থ                               G-Pa
রাবার0.01 - 0.1
হাড়9
কাঠ10
অ্যালুমিনিয়াম69
তামা           117
লোহা200
হীরা1220
কাচ50 -60

 

 

(ii) ধরা যাক একটি সিলিন্ডারে সাধারণ অবস্থায় % আয়তনের গ্যাস আছে। এই গ্যাসে P চাপ দেওয়ার কারণে সিলিন্ডারের গ্যাসের আয়তন কমে হয়ে গেল  এখানে পীড়ন হচ্ছে P এবং বিকৃতি হচ্ছে: 

 

                                                 V-V0V0

কাজেই আমরা লিখতে পারি 

                           

এখানে B হচ্ছে ধ্রুবক এবং এই ধ্রুবকের নাম বাল্ক মডুলাস বা আয়তনীয় গুণাঙ্ক (Bulk Modulus)। B এর একক হচ্ছে Nm2 কিংবা প্যাসকেল। 

Content added By
Content updated By
Promotion